যানবাহনে ভাড়া নৈরাজ্য, দেখার কেউ নেই !!!

 উৎসব মানে আনন্দ আর আনন্দ মানে বন্ধু-বান্ধব , আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে একটু ঘুরাঘুরি। অনেক সময় দেখা যায় যানবাহনের ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে সেই আনন্দ ধুলিস্যাৎ হয়ে মনে জন্ম নেয় ক্ষোভ , আর সেই ক্ষোভ থেকে অনেক যাত্রীকে বলতে শোনা যায় আসলে কি দেশে ভাড়া সম্পর্কিত কোন আইন আছে ? অথচ দেশের জনগণের সুবিধা এবং ভাগ্যোন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই দেশে যে যার মত করে পারছে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। ঢাকা-মাওয়া রুটের নৈরাজ্য দিয়েই শুরু করতে চাই কারণ এর শিকার আমি নিজেই। সেদিন ছিল সোমবার ২০ জুন ২০১৮। ঈদ-উল ফিতর এর দুই দিন পর। আমার এক বন্ধু বেলা ১১.০০ টায় আমাকে ফোন করে বলল “দোস্ত ফ্যামিলি নিয়ে চলেন একটু পদ্মা রিসোর্ট ঘুরে আসি”। রাজি হয়ে গেলাম। যথারীতি ৩.১০ এ আমার পরিবারের ৫ জন , আর বন্ধুর ফ্যামিলির ৩ জন মোট ৮ জন উঠলাম ঢাকা-মাওয়া রুটের বি আর টি সি বাসে। কন্ট্রাক্টর ৮ জনের ভাড়া দাবি করল ৫৬০ টাকা। দোস্ত ৫০০ টাকার নোট দিয়ে বলল আমরা তো ৬০ টাকা জন প্রতি যাই। ২০ টাকা ফেরত দাও। যাই হোক কন্ট্রাকটর ২০ টাকা ও দিল না আর বাকী ৬০ টাকা ও চাইল না। মাওয়া ঘাটে নেমে প্রথম ধাক্কা খেলাম স্পিড বোট ভাড়া করতে গিয়ে। একই দূরত্বের জন্য একজন চায় ১৮০০ আর একজন চায় ৩০০০ অন্য আর একজন চায় ৪০০০ টাকা। তাই যে কম চাইল তার সাথে কথা ফাইনাল করার মুহুর্তে সাক্ষাৎ হল এক দালাল চক্রের সাথে। তারা আর ঐ ১৮০০ টাকা দাবী করা ড্রাইভারকে আমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে দিল না। এমনি ভাবে যত কয়জনের সাথে কন্ট্রাক্ট করতে গেছি ঐ দালাল চক্র সেখানে যেয়ে হাজির। পরে আমার সাথে থাকা দোস্ত গোপনে গোপনে দালাল চক্রের চোখে ধূলা দিয়ে অন্য এক ট্রলারের সাথে রফাদফা করে ১৫০০ টাকায় ঐ দূরত্ব ঘুরে আসলাম। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ফিরার পথে দোস্ত উঠবেন হাসনাবাদের গাড়িতে আর আমি চুনকুটিয়ার গাড়িতে। প্রথম ইলিশ পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে ৭৫ টাকার টিকিট দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নিচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম কি ভাই আসার সময় চাইল ৭০ টাকা করে এখন ১০০ টাকা কেন ? উত্তর আসল আমি একা না সব গাড়িতেই ১০০ টাকা , গেলে উঠেন না হয় রাস্তা ছাড়েন। উপায়ান্ত না দেখে দোস্ত পরে ১০০ টাকা করেই রাজী হল। ইলিশ পরিবহনে উঠল। আমি সামনের দিকে এগিয়ে বাবু বাজার/ নয়াবাজার রুটের আপন পরিবহন (প্রাঃ) লিঃ এর একটি গাড়িতে উঠলাম। ভাড়া কাটতে আসল। ৩৫০ টাকা দিলাম। কন্ট্রাক্টর টাকা হাতে নিয়ে গুনে অগ্নীমুর্তি হয়ে বলল “ইয়ার্কি করেন ? ৫০০ টাকা লন”। আমি বললাম ভাড়া তো ৭৫ টাকা। কন্ট্রাক্টর বলল টিকেট পাবেন ৭৫ টাকার কিন্তু দিতে হবে ১০০ টাকা। মান সম্মানের ভয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে ৩৭৫ টাকার টিকিট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল। মজার বিষয় হল একটি যাত্রীর কাছে সর্ব সাকুল্যে আছে ৮০ টাকা। কারন সে জানে ভাড়া ৭৫ টাকা, হিসাবে আরো ৫ টাকা অতিরিক্ত থাকার কথা। কিন্তু বিধি বাম কন্ট্রাক্টর তো ১০০ টাকার কম নিবে না। লোকটি ৮০ টাকা দিল। কন্ট্রাক্টর নেবে না উপরন্ত তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে চাইল। পরে কয়েকজন যাত্রী সুপারিশ করে ৮০ টাকায় মানালাম। গত ২১.০৬.২০১৮ ইং প্রকাশিত প্রথম আলো পত্রিকার ৭ এর পাতায় বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় “ শিরোনামে নবাবগঞ্জ প্রতিনিধির লিখায় ও যানবাহনে ভাড়া নৈরাজ্যের চিত্র ফুটে উঠেছে। খোদ বাস মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে ছাপাই গাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে এন মল্লিক পরিবহনের কর্নধার নার্গিস মল্লিকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার যুক্তি ঈদের সময় একমূখী বাস চলে। তাই ভাড়া একটু বেশী নেয়া হয়। এটি আমার কাছে খোড়া যুক্তি বলে মনে হয়। কারণ ঈদের পর স্বাভাবিক অবস্থায় যখন বাস দুই মূখী চলে তখন কি নির্দিষ্ট ভাড়া থেকে তারা ভাড়া কমিয়ে দেন ? না , কমান না বরং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে (যেমন বৃষ্টি , রাস্তা খারাপ, অবরোধ , মিছিল , কুয়াশা , বাসের সংখ্যা কম , বিশ্ব ইস্তেমা ইত্যাদি) বাসের ভাড়া নিজেরাই বৃদ্ধি করে দেয়। জনগণ পাঠার বলি হয়ে সব সহ্য করে নেয়। এ নৈরাজ্য শুধু ঢাকা- মাওয়া বা ঢাকা-বান্দুরায় নয় এটি এখন সারা দেশে অহরহ চলছে। অথচ আমরা মনে করছি দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায়। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশের জনগণের সুবিধার জন্য যার-পর নাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেখানে জনগন স্বস্তি পাবে শান্তি পাবে। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু তা হচ্ছে না , হচ্ছে উল্টোটা। বর্তমানে রিক্সা থেকে শুরু করে সিএনজি , টেম্পু , লেগুনা , অটোরিক্সা , মিনিবাস , বড় বাস , ছোট বাস , এক কথায় সকল ধরণের পাবলিক যানবাহনে এ নৈরাজ্যটি চলে আসছে। এগুলোর মধ্যে রিকশার কোন নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নাই। বাকী সবগুলোরই একটি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড আছে। আর ঐ স্ট্যান্ডকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। মূলত ঐ সিন্ডিকেটের হাতেই থাকে ভাড়া নির্ধারনের চাবিকাঠি। মনে করল বেশি টাকা প্রয়োজন , দিল ১০ টাকার ভাড়াকে ১৫ টাকা বানিয়ে। ৮০ টাকার ভাড়া ১৫০ টাকা আর ৭৫ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা। এছাড়া নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তো আছেই। এ সকল চাঁদার ঘানি টানতে হয় সাধারণ জনগণকেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো করছে কারা ? উত্তর হল যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারেরই কিছু পদলেহী ব্যক্তিবর্গ যারা সরকারের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থটিকে বড় করে দেখে । তারা হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে। তাদের এই স্বপ্নের কাছে জিম্মি দেশের জনসাধারন। যারা প্রাইভেট কারে চড়েন তাদের কথা আলাদা। বর্তমান সরকারের এত সাফল্যের পর ও যখন শুনি গুটি কয়েক সুযোগ সন্ধানী লোকের জন্য যাত্রী সাধারণ সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে তখন মনে হয় সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা কিছু ব্যক্তি কৌশলে সরকার এর সুনাম ক্ষুন্ন করার কাজে লিপ্ত। তারা সরকারের কাঁদে বন্দুক রেখে নিজের সুবিধা মত গুলি করে যাচ্ছে। সুতরাং সরকারের উচিত যানবাহনের ভাড়া নৈরাজ্যের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে মালিক এবং চালকদের চাঁদাবাজির হাত থেকে রক্ষা করে সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ার বাস্তবায়ন করা। লেখক: মোঃ গোলাম হোসেন প্রধান শিক্ষক, শুভাঢ্যা উচ্চ বিদ্যালয়। কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment